আইন বিজ্ঞান
আইন বিজ্ঞান কাকে বলে? এর প্রকৃতি পরিধি ও বিষয়বস্তু :
ইংরেজী শব্দ ইংরেজি শব্দ 'Jurisprudence'এর বাংলা অনুবাদ আইন বিজ্ঞান। ল্যাটিন শব্দ 'Jurisprudentia' হতে 'Jurisprudence' উদ্ভুত। 'জুরিস' এর অর্থ আইন এবং 'প্রুডেনসিয়া' এর অর্থ জ্ঞান। অতএব উৎপত্তিগত অর্থে আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান কে জুরিসপ্রুডেন্স বা আইন বিজ্ঞান বলে। ব্যাপক অর্থে জুরিসপ্রুডেন্স আইন এর সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বা কোন শাস্ত্রের আইনগত সম্পর্ককেও বুঝায়। যেমন- মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স, আর্কিটেকচারাল জুরিসপ্রুডেন্স ইত্যাদি। আইন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জুরিসপ্রুডেন্স এসব ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় না। আইন সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধান ও অনুশিলণ করাই হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। কোনো দেশের আইন বা কোনো বিশেষ আইন সম্পর্কে অনুসন্ধান না করে বরং আইনের সাধারণ ধারণা সম্পর্কে আইন বিজ্ঞান অধ্যায়ন করে। এ্যালেন (Allen) এর মতে, - আইনের মূল নীতিগুলির বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ হচ্ছে আইন বিজ্ঞান।
বিভিন্ন বিজ্ঞানি তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আইন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। স্যামন্ড (Salmond) আইন বিজ্ঞানের সজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে যে, দেশের আইনের প্রাথমিক মূল নীতিগুলির বিজ্ঞান হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। রোমান আইন শাস্ত্রবিদ আলপিয়ানের মতে, মানবিক ও ঐশ্বরিক বিষয়বস্তুর পর্যবেক্ষণ এবং ন্যায়-অন্যায়ের বিজ্ঞান হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। ব্রিটিশ আইন বিজ্ঞানের জনক নামে পরিচিত স্যার জন অস্টিন,- আইন বিজ্ঞান কে মানুষ্য কর্তৃক নির্ধারিত আইনের দর্শন হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। অপর একজন রোমান আইনবিশারদ সিসারো, আইন বিজ্ঞানকে দর্শন শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করেন। তার মতে, দর্শন শাস্ত্রের নিরিখেই আইনকে অধ্যায়ন করতে হবে। বেনথাম বলেন যে, প্রচলিত আইনের বিস্তৃত আলোচনা ও আদর্শ আইনভিত্তিক সম্পর্কিত ধ্যানধারনাই হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। প্রখ্যাত আইন বিজ্ঞানী জুরিস্ট প্যাটন আইন বিজ্ঞান কে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত আইন শাস্ত্র বা সমতার নীতি সম্পর্কিত আইন শাস্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন। সর্বাপেক্ষা যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেন অধ্যাপক হল্যান্ডে তার মতে, যথার্থ আইন এর আনুষ্ঠানিক বিধান হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। আইনের শাসন দ্বারা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ এর বিধি হচ্ছে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান এর অর্থ হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান। বস্তুনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা আহরিত জ্ঞান কে বিজ্ঞান বলা হয়। অতএব আইন বিজ্ঞান বলতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের আইন, আইনত্ত্ব ও আইন ব্যবস্থার মূল নীতিগুলি অধ্যায়ন করাকে বুঝায়।
বিজ্ঞান এর অর্থ হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান। বস্তুনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা আহরিত জ্ঞান কে বিজ্ঞান বলা হয়। অতএব আইন বিজ্ঞান বলতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের আইন, আইনত্ত্ব ও আইন ব্যবস্থার মূল নীতিগুলি অধ্যায়ন করাকে বুঝায়।
প্রকৃতিঃ
আইন বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ স্বরুপ। ইহা কোন দেশের আইন বা নির্দিষ্ট আইন পর্যবেক্ষণ করে না। সামগ্রিকভাবে আইনের সূত্র গুলি কে বিশ্লেষণ করে। আইনগত বিধানের প্রকৃতি, আইনগত ধারনার ব্যাখ্যা এবং আইন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আইন বিজ্ঞান আলোকপাত করে। এছাড়া আইনের প্রয়োজনীয়তা, নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের সথে আইনের সম্পর্ক অনুসন্ধান করে আইন বিজ্ঞান। তাই আইন বিজ্ঞান কে আইনের ব্যাকরন হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আইন বিজ্ঞানের পরিধিঃ
সদা পরিবর্তনশীল সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতিবোধের উপর নির্ভরশীল আইন কে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে আইন বিজ্ঞান কে সঠিক ভাবে বুঝতে হবে। আইন বিজ্ঞান শুধু আইন জানতে সাহায্য করে না, আইন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার গবেষণা করার এবং প্রয়োগ সম্পর্কে শিখতে সাহায্য করে। ক্রমবর্ধমান আইন বিজ্ঞানের পরিধি মধ্যে মূলত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
প্রথমতঃ প্রখ্যাত আইন বিজ্ঞানী প্যাটন, এর মতানুসারে আইন বিজ্ঞান এর কাজ হচ্ছে আইনের প্রকৃতি, আইনগত প্রতিষ্ঠানগুলির প্রকৃতি, এগুলোর বিকাশ এবং সমাজের সাথে এগুলোর সম্পর্ক অধ্যায়ন করা। সামাজিক প্রয়োজনেই আইনের উদ্ভব এবং সামাজিক মূল্যবোধের উপর এই আইনের ভিত্তি। কাজেই আইন যে সকল সামাজিক প্রয়োজন মেটায় তা সকল সমাজের এক নয়। কাজেই এসকল প্রয়োজনের কোনো সমাধান আইন বিজ্ঞান দেয় না বটে, তবে এ সম্পর্কে আইনে তত্ত্ব বা নীতি সম্পর্কে আইন বিজ্ঞান নির্দেশ দেয়। আইন আইনগত ধ্যান-ধারণা সমূহ এবং সমাজ জীবনের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে আইন বিজ্ঞান।
দ্বিতীয়তঃ আইন বিজ্ঞান আইনগত ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। অন্যায় বা অবৈধ কার্য, আইনগত ক্ষতি, অভিপ্রায়, মোটিভ, অবহেলা, মালিকানা, দক্ষল ইত্যাদি আইনগত ধারণা বিভিন্ন আইন গ্রন্থে আলোচিত হয়। কিন্তু এগুলির উৎপত্তি, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ চেষ্টা করা হয় আইন বিজ্ঞানে। ব্যাকরণ যেমন ভাষাকে শুদ্ধ ভাবে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে, আইন বিজ্ঞান আইনের মৌলিক ধারণা সমূহ বিশ্লেষণ করে আইনকে সহজতর করে। উদাহরণস্বরূপ অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যে তথ্য বিশ্লেষণ আইন বিজ্ঞান করে থাকে তার উপর ভিত্তি করে সমাজে আইন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এর সকল আইনগত ধারণাসমূহ পরিবর্তন হয় এবং এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী সামাজিক উপাদান গুলি আইন বিজ্ঞানের আলোচিত হয়
তৃতীয়তঃ আইনগত কর্তৃত্বের প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সম্পর্কেও আইন বিজ্ঞান অনুসন্ধান করে। আইন প্রণয়ন, বিধিবদ্ধকরন, বিচারের পূর্বে দৃষ্টান্ত অনুসরণ, বিচারকার্যে বস্তুনিষ্ঠ নীতি অবলম্বন ইত্যাদি বিষয়ও আইন বিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত।
চতুর্থঃ ন্যায় বিচার পরিচালনার জন্য এর মূল নীতিগুলিও আইন বিজ্ঞানে আলোচিত হয়। এছাড়া আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ ব্যাখ্যা করা এবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দান করে আইন বিজ্ঞান।
পঞ্চমতঃ আইনের উৎস ও বিবর্তন ছাড়াও এর গবেষণামূলক ব্যাখ্যা, ঐতিহাসিক বিশ্লেষন এবং নৈতিক বা দার্শনিক বিশ্লেষণ করাই হচ্ছে আইন বিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।
আইন বিজ্ঞানের এরূপ ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিধির কারণে সমাজ পরিচালনার কৌশলগত দিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রকৌশলী যেমন তার জ্ঞানকে প্রকৌশল শাস্ত্র বিভাগে ব্যবহার করে, তেমনি আইন বিজ্ঞান একটি নিয়মতান্ত্রিক বিজ্ঞান হিসেবে আইনের বিভিন্ন দিক বিকশিত করতে সাহায্য করে।
আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তাঃ
আইন বিজ্ঞানের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় না কিন্তু আইন প্রয়োগ কালে এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আইন বিজ্ঞান এর প্রয়োজন হয়। তাই আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ না হলেও এর বাস্তব মূল্য অপরিসীম। এগুলি মূলত নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ আইনের মৌলিক ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করে আইন বিজ্ঞান। তাই অধ্যাপক হল্যান্ড, আইন বিজ্ঞান কে 'আইন শিক্ষার ব্যাকরন' হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আইন বিজ্ঞান পাঠ করলে আইনের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই অবৈধ কার্য, আইনগত ক্ষতি, অভিপ্রায়, শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আইন বিজ্ঞান যেরুপ বিশ্লেষণ করে সেগুলো আয়ত্ত করলে একজন আইনের ছাত্র কোন আইনগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদর্শনের কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারে। কাজেই একজন সুদক্ষ আইনজীবী বা আইনবিদ হতে হলে আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন।
প্রথমতঃ আইনের মৌলিক ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করে আইন বিজ্ঞান। তাই অধ্যাপক হল্যান্ড, আইন বিজ্ঞান কে 'আইন শিক্ষার ব্যাকরন' হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আইন বিজ্ঞান পাঠ করলে আইনের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই অবৈধ কার্য, আইনগত ক্ষতি, অভিপ্রায়, শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আইন বিজ্ঞান যেরুপ বিশ্লেষণ করে সেগুলো আয়ত্ত করলে একজন আইনের ছাত্র কোন আইনগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদর্শনের কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারে। কাজেই একজন সুদক্ষ আইনজীবী বা আইনবিদ হতে হলে আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়তঃ সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য আইন গৃহীত হয় বা প্রণীত হয়। স্যামন্ড বলেন, "দেশের আইন কাঠামোর উপর প্রয়োজনীয় আলোকপাত করা হলো আইন বিজ্ঞান পাঠের মুখ্য উদ্দেশ্য।" একটি দেশের আইন সভা বা আইন প্রণেতাগণ আইন বিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে দেশের জন্য বিজ্ঞানসম্মত আইন প্রণয়নে সচেষ্ট হন। কাজেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন বিজ্ঞানের ভূমিকা যথেষ্ট। নতুন কোনো আইন প্রণীত হলে এর কার্যকরিতা কিরূপ হবে এবং ইহা কিভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে আইন বিজ্ঞান যথার্থভাবে পাঠ করতে হবে।
তৃতীয়তঃ আইন বিজ্ঞান পাঠ করে এক ব্যক্তি সচেতন নাগরিক হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও অধিকার আছে। একজনের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে অন্যের অধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। আইন বিজ্ঞান এরুপ প্রয়োজনীয় জ্ঞান দেয়।
চতুর্থঃ বিচার প্রশাসন আইন বিজ্ঞানের এক অন্যতম বিষয় বিধায় বিচার কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আইন বিজ্ঞান অধ্যায়নের প্রয়োজন। শাস্তির উদ্দেশ্য কি এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তির প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকরীতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে আইন বিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন। একজন ভালো বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই একজন ভালো আইন বিজ্ঞানী হতে হবে।
পঞ্চমতঃ এই শাস্ত্র অধ্যয়ন এর দ্বারা মানুষের মন আইনগত চিন্তাধারার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। তাই আইনের গবেষণার ক্ষেত্রে আইন বিজ্ঞান যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এ জন্য আইন শাস্ত্র গবেষকদের জন্য আইন বিজ্ঞান পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়।
ষষ্ঠতঃ আইন বিজ্ঞান যেহেতু আইনের ব্যাকরণ,চক্ষু ও অভিধানস্বরুপ যেহেতু আইনের যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে হলে প্রথমে আইন বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।
পরিশেষে ইহা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আইন বিজ্ঞান শুধু যথার্থ আইনবিদ, বিচারক, আইন গবেষক ও সচেতন নাগরিক হতে সাহায্য করে না তাই নয় এই শাস্ত্র পাঠে লব্ধ জ্ঞান সমগ্র আইনগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ
১) আইন বিজ্ঞান আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান দ্বারা আইনের পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান চালানো যায়। ইহা কোনো কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে না।
আইন হলো সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ও প্রয়োগকৃত বিধিমালা।
২) আইন বিজ্ঞান আইন ও আইন বিজ্ঞানের মূলনীতি পর্যালোচনা করে এবং আইনে ব্যবহৃত শব্দগুলির ব্যাখ্যা প্রদান করে।
পক্ষান্তরে আইন ন্যায়পর প্রতিষ্ঠা করে। জনগণের কল্যাণ সুনিশ্চিত করাই আইনের মূল লক্ষ্য।
পক্ষান্তরে আইন ন্যায়পর প্রতিষ্ঠা করে। জনগণের কল্যাণ সুনিশ্চিত করাই আইনের মূল লক্ষ্য।
৩) আইন বিজ্ঞানের প্রয়োগের ক্ষেত্র সারা বিশ্ব, বিশ্বের আইন ব্যবস্থা সমূহের সাধারণ ধারণা এবং মৌলিক নীতি সমূহ আলোচনা করাই এর বিষয়বস্তু।
কিন্তু আইনের প্রয়োগ দেশের অভ্যন্তরে (আন্তর্জাতিক আইন ব্যতীত)
কিন্তু আইনের প্রয়োগ দেশের অভ্যন্তরে (আন্তর্জাতিক আইন ব্যতীত)
৪) আইন বিজ্ঞান কোনো অধিকার ও বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে না বরং এ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে।
অপরদিকে আইন অধিকার ও বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।
অপরদিকে আইন অধিকার ও বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।
৫) আইন বিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয় এই কারণে যে, ইহা বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ চালায়।
কিন্তু আইন কে বিজ্ঞান বলা হয় না, ইহা নিজেই পর্যবেক্ষন ও গবেষণার বিষয়বস্তু।
কিন্তু আইন কে বিজ্ঞান বলা হয় না, ইহা নিজেই পর্যবেক্ষন ও গবেষণার বিষয়বস্তু।
৬) আইন বিজ্ঞানের ধারণাসমূহ প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কালের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ ও প্রভাব দ্বারা নিরূপিত।
অথচ এই আইনে এরূপ পরিদৃষ্ট হয় না।
অথচ এই আইনে এরূপ পরিদৃষ্ট হয় না।
৭) আইন বিজ্ঞান আইনের কাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
কিন্তু আইন এসব ক্ষেত্রে প্রবেশ করে না।
কিন্তু আইন এসব ক্ষেত্রে প্রবেশ করে না।
৮) আইন বিজ্ঞান একটি মূল শাস্ত্র,
কিন্তু আইন হচ্ছে এই শাস্ত্র প্রয়োগের মূল বিষয়। ব্যাকরণ যেমন ভাষা শেখার শাস্ত্র, আইন বিজ্ঞান তেমনি আইন শেখার শাস্ত্র।
কিন্তু আইন হচ্ছে এই শাস্ত্র প্রয়োগের মূল বিষয়। ব্যাকরণ যেমন ভাষা শেখার শাস্ত্র, আইন বিজ্ঞান তেমনি আইন শেখার শাস্ত্র।
আইন বিজ্ঞান যুক্তি শাস্ত্র কি না?
উৎপত্তিগত অর্থে আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান কে আইন বিজ্ঞান বলে। কিন্তু ব্যাপক ও স্থুল অর্থে এটা আইনের সমার্থক হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। এ্যালেন এর মতে, আইনের মূলনীতি গুলোর বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। কিন্তু যুক্তি শাস্ত্র হচ্ছে কোন সিদ্ধান্ত বা উপনীত সত্যতা বা অসত্যতা প্রদর্শনের প্রচেষ্টা। কোন মতবাদ এর সত্যতা নিরূপণের প্রচেষ্টা ব্যতিরেকেও অবশ্য যুক্তিযুক্তভাবে এর বিশ্লেষণ বা তদন্ত করার প্রয়াস থাকে যুক্তিশাস্ত্রে। কিন্তু আইন বিজ্ঞানের ক্ষেতে যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ বা অনুসন্ধানে কোন অবকাশ নেই। তাই ইংল্যান্ডের প্রধান বিচারপতি কোক মন্তব্য করেছিলেন যে, কোন স্বাভাবিক বা যুক্তিযুক্ত তার আলোকে কোন বিচার কার্য সমাধা করা যায় না বরং কৃত্রিম যুক্তি এবং আইন প্রদর্শিত পন্থায় তা সমাধা করতে হয়। এটা এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত যে, কোন মোকাদ্দমার জট খুলে তার আইন সম্মত সমাধান করতে যে অভিনব পন্থা অবলম্বন করতে হয় তার সাথে যুক্তি শাস্ত্রের পন্থাগুলোর কতোটুকু সাদৃশ্য রয়েছে সে বিষয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। ফ্রাঙ্ক,কনসট্যাম, স্টোন প্রমুখ আইন বিজ্ঞানীর মতে, যুক্তি শাস্ত্রের নিরিখে আইনশাস্ত্র বিশ্লেষণ যথার্থ নয়। আইনে যুক্তি শাস্ত্রের প্রভাব সম্পর্কে প্রধান আপত্তি হচ্ছে এই যে, যুক্তি শাস্ত্রে প্রক্রিয়া হচ্ছে অনমনীয় ও কঠোর কিন্তু আইনের প্রক্রিয়া গুলো যথেষ্ট নমনীয় ও প্রায়োগিক। তাদের মতে, আইনের গতিপথ কোন যুক্তি তর্কের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব জীবনের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল। তাই মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনের পরিবর্তন হয়, কোন যুক্তি তর্কে যার কোন সমাধান পাওয়া যায় না। তাই ক্রীতদাস, সহ-মরণ ইত্যাদির ন্যায় নিষ্ঠুর ও অমানবিক প্রথা একসময়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও কালক্রমে মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে তা বিলুপ্ত হয়েছে। জ্যামিতিক স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় কোন নির্দিষ্ট সূত্রের উপর ভিত্তি করে আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং সামাজিক মঙ্গল ও শান্তির লক্ষ্যেই আইনের সৃষ্টি।
যদিও যুক্তি শাস্ত্র আইনশাস্ত্র হতে স্বতন্ত্র এবং নিজ বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার গুণে স্বভুবনে ভাস্বর তবুও পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।বৃটিশ কমন'ল মূলত অলিখিত, যা প্রথা ও রীতিনীতির উপর গড়ে উঠেছে। কেস'ল বা মামলার সিদ্ধান্তের মাধ্যে গড়ে ওঠা আইন কমন'ল এর এক অন্যতম উপাদান। সিদ্ধান্তিত মামলাগুলো পরীক্ষা করে এগুলোর নীতিসমূহ জানতে পারা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টান্ত থেকে একটা সাধারন শুত্রে আনার প্রক্রিয়া কিন্তু যুক্তি শাস্ত্রের মাধ্যমে করা হয়। অমিশ্র বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে উদঘাটন বা আবিষ্কার কিন্তু আইনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োগ বা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। কোন চুক্তির মধ্যে দণ্ডের বিধান থাকে তার বলবৎযোগ্য কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারক এ সম্পর্কিত পূর্ব সিদ্ধান্ত গুলো অনুসন্ধান করতে থাকেন। পূর্বোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বা তা থেকে ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত নেওয়া তার এখতিয়ার ভুক্ত তবে যাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন এর পেছনে কী যুক্তি রয়েছে বা কোন নীতি বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা অবশ্যই রায়ে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তিতর্কের সাথে আইনের সাদৃশ্য দেখা যায়।
তাই দেখা যায় যে, আইন যুক্তি শাস্ত্রের উপর ভিত্তিশীল নয়, তবে এটা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন ও নয়। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তি শাস্ত্রকে বাদ দেয়া যায় না। আবার যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক মনে হলেই কোন নীতিকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা যায় না, যতক্ষণ তা আইনের নীতি দ্বারা সমর্থিত না হয়। তাই বলা যায় যে, অন্যান্য শাস্ত্র যেমন ন্যায় নীতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদির সংমিশ্রন আইনে যে রূপ হয়েছে যুক্তিশাস্ত্রের অনেক উপাদানও আইন উদারভাবে গ্রহণ করেছে।
যদিও যুক্তি শাস্ত্র আইনশাস্ত্র হতে স্বতন্ত্র এবং নিজ বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার গুণে স্বভুবনে ভাস্বর তবুও পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।বৃটিশ কমন'ল মূলত অলিখিত, যা প্রথা ও রীতিনীতির উপর গড়ে উঠেছে। কেস'ল বা মামলার সিদ্ধান্তের মাধ্যে গড়ে ওঠা আইন কমন'ল এর এক অন্যতম উপাদান। সিদ্ধান্তিত মামলাগুলো পরীক্ষা করে এগুলোর নীতিসমূহ জানতে পারা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টান্ত থেকে একটা সাধারন শুত্রে আনার প্রক্রিয়া কিন্তু যুক্তি শাস্ত্রের মাধ্যমে করা হয়। অমিশ্র বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে উদঘাটন বা আবিষ্কার কিন্তু আইনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োগ বা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। কোন চুক্তির মধ্যে দণ্ডের বিধান থাকে তার বলবৎযোগ্য কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারক এ সম্পর্কিত পূর্ব সিদ্ধান্ত গুলো অনুসন্ধান করতে থাকেন। পূর্বোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বা তা থেকে ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত নেওয়া তার এখতিয়ার ভুক্ত তবে যাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন এর পেছনে কী যুক্তি রয়েছে বা কোন নীতি বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা অবশ্যই রায়ে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তিতর্কের সাথে আইনের সাদৃশ্য দেখা যায়।
তাই দেখা যায় যে, আইন যুক্তি শাস্ত্রের উপর ভিত্তিশীল নয়, তবে এটা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন ও নয়। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তি শাস্ত্রকে বাদ দেয়া যায় না। আবার যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক মনে হলেই কোন নীতিকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা যায় না, যতক্ষণ তা আইনের নীতি দ্বারা সমর্থিত না হয়। তাই বলা যায় যে, অন্যান্য শাস্ত্র যেমন ন্যায় নীতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদির সংমিশ্রন আইনে যে রূপ হয়েছে যুক্তিশাস্ত্রের অনেক উপাদানও আইন উদারভাবে গ্রহণ করেছে।
আইন বিজ্ঞানের ইতিহাসে মধ্যযুগের ইসলামী আইনের গুরুত্ব :
মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্র এবং বিশ্ব ব্যবহার শাস্ত্র বিশেষ করে পাশ্চাত্য ব্যবহার শাস্ত্র প্রায় সমান্তরালভাবে বিকাশ লাভ করেছে । "শরিয়া" বা স্বর্গীয় আইন হচ্ছে মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্রে ভিত্তি এবং শরিয়া'র মূল কথা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবন দশায় এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে শরিয়া আইন সম্পর্কে কোন মতবিরোধ ছিল না। বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক আল গাজ্জালীর মতে - একাদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মতবিরোধ ছিল না । কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষ করে আব্বাসীয় যুগে বহির্বিশ্বে ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং বিভিন্ন ভাষা , কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, ভৌগলিক পরিবেশ ইত্যাদির জনগণ কর্তৃক ইসলাম গ্রহণের পর এই শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিভিন্ন মতাদর্শের ভিত্তিতে সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে চারটি মাজহাবের উৎপত্তি হয়। এগুলো হচ্ছে হানাফী , মালিকী, শাফী , হাম্বলী । এই মাজহাবগুলোর প্রতিষ্ঠাতাগণ এমন ধীশক্তিসম্পন্ন ও ব্যবহার শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন যে পরবর্তীকালে কেউ তাদেরকে অতিক্রম করতে পারেননি। এ সকল শাস্ত্রবিদগণ ইজমাকে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং কিয়াস, ইসতিহসান, ইসতিহদলাল, ইসতিসলাহসহ, নানা বিধ নীতির প্রবর্তন করে শুধু মুসলিম আইন বিজ্ঞানকে সম্মৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেননি বরং সমগ্র আইন বিজ্ঞান কে সমৃদ্ধশালী করেছেন। ইমাম আবু হানিফা সর্বপ্রথম আইন-বিধি সম্প্রসারিত করার জন্য কিয়াস এর প্রবর্তন করেন যা পরবর্তীকালে খুব বেশি ব্যবহৃত হয়েছে । তিনি বিচার নীতি হিসাবে ইসতিহসান প্রবর্তন করেন । যার আক্ষরিক অর্থ হলো অগ্রাধিকার প্রদান। এটি বহুলাংশে ইংল্যান্ডে প্রবর্তিত ইকুইটির অণুরূপ । আইনের বিধিগুলোকে বিশেষ অবস্থায়, বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথার্থ মনে হতো এই নীতি প্রয়োগ করে তার সমাধান করা হত । ইমাম আবু হানিফা ইজমার পরিধি সম্প্রসারিত করেন এবং সকল যুগের আইনবিদদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ কে ইজমা হিসাবে গ্রহণ করেন । ইমাম আবু হানিফাই ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যবহার শাস্ত্রবিদ যিনি আইনের রীতিবদ্ধ শিক্ষা প্রণালী প্রবর্তন করেন এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সকল প্রকার প্রশ্নের মীমাংসা করার মতো উল্লেখযোগ্য আইনের নীতি নির্ধারণ করেন ।
ইমাম আবু হানিফার ইসতিহসান এর মতো ইমাম মালিকও একটি মতবাদ প্রবর্তন করেন যাকে ইসতিসলাহ বলা হয়। এই মতবাদের ভিত্তি হলো জনগণের মঙ্গল বা কল্যাণ । তিনি ইসতিসলাহ নামে একটি যুক্তি তর্কবাদ প্রবর্তন করেন। অষ্টম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম আইন শাস্ত্রবিদ ইমাম শাফি আইন বিজ্ঞানের ক্লাসিক নীতি প্রবর্তন করেন । এই সময়কালের আর একজন মনীষী ছিলেন ইমাম ইবনে হাম্বল । আইন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি গভীরভাবে সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণ করতেন । ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রবর্তিত ফতোয়া-ই -আলমগীরী ও আইন বিজ্ঞানের বিকাশে যথেষ্ট অবদান রেখেছে ।
ইসলাম একটি সর্বজনীন ধর্ম এবং ধর্মের ভিত্তিতে ইসলামী আইন গড়ে উঠলেও এর প্রয়োগ অত্যান্ত ব্যাপক । তাই ইসলামী আইন শাস্ত্রের নীতি গুলোও বিশ্বব্যবহার শাস্ত্রে উদার ভাবে ব্যবহার করা যায় ।
ইসলামী আইন ও পজেটিভ 'ল এর মধ্যে পার্থক্য :
ইসলামি আইন বিজ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞান এর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমান :
প্রথমত : ইসলামী আইন মূলত ঐশ্বরিক । আল্লাহর নির্দেশ ও রাসুলের উপদেশ ছাড়া মানুষের তৈরি আইনের কোন স্বীকৃতি এতে নেই।
কিন্তু আধুনিক আইন ধর্মনিরপেক্ষ । মানব সমাজে প্রচলিত সকল আইনই এর বিষয়বস্তু। কাজেই আইন এখানে মানব সৃষ্ট।
দ্বিতীয়ত : ইসলামী আইনে নৈতিক বিধান ও আইনগত বিধানের মধ্যে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না । কেননা ইহা আল্লাহর আদেশ তথা ধর্ম ও ন্যায় নীতির উপর ভিত্তিশীল ।
অপরপক্ষে, আধুনিক আইন তত্ত্বের উদ্দেশ্য হচ্ছে নৈতিক বিধান ও আইনগত বিধানের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এখানে শুধু আইনগত বিধানই গ্রহণযোগ্য। তাই আধুনিক বিজ্ঞান পার্থিব আইন ও দর্শনভিত্তিক।
তৃতীয়ত : ইসলামী আইন বিজ্ঞানের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক সুখ শান্তির বিধান করা।
পক্ষান্তরে, আধুনিক আইন তত্ত্বের উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলার বিধান, যা সম্পূর্ণরূপে জাগতিক এবং পরকালের সঙ্গে সম্পর্কহীন ।
চতুর্থত : ইসলামী আইন তথ্য অনুযায়ী আইন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কর্তৃক রাসুল এর মাধ্যমে প্রেরিত আদেশ ও নিষেধ ।
কিন্তু আধুনিক আইনতত্ত্ব মোতাবেক আইন হচ্ছে সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের আচরণ বিধি, যা রাষ্ট্রকর্তৃক প্রয়োগ করা হয়।
পঞ্চমত : ইসলামী আইন সামাজিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই এই আইনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা বাতিল করা সম্ভব নয়। কিন্তু ইসলামী আইন বিশারদগণ এর ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে।
পক্ষান্তরে, আধুনিক আইন সামাজিক মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল বিধায় ইহা পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বাতিলযোগ্য ।
ষষ্টতঃ আধুনিক আইনের বিধান ভঙ্গ করলে আদালতের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়
কিন্তু ইসলামী আইনের বিধান ভঙ্গ করলে পরলৌকিক শাস্তির ভয় থাকে । অবশ্য যে সকল রাষ্ট্রে ইসলামী আইন চালু রয়েছে সে সকল দেশে এই আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার ও স্বীকৃত আছে ।
সপ্তমতঃ ইসলামী আইন কোন রাষ্ট্রীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না সমগ্র মানব সমাজের জন্য প্রযোজ্য কিন্তু আধুনিক আইন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আইন বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান এর মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর। এই প্রশ্নের উত্তরটা সহজ ভাবে দেয়া যাবে??
ReplyDelete