Breaking News

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জরুরী অবস্থা

 
BDbiplob_Emergency_Image


জরুরী অবস্থা  হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি যা স্বাস্থ্য, জীবন, সম্পত্তি বা পরিবেশের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অধিকাংশ জরুরী অবস্থায় ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুত হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন হয়। যদিও কিছু পরিস্থিতিতে ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে পরবর্তীতে শুধুমাত্র উপশমকারী পরিষেবা দেওয়া হয়।
কিছু জরুরী হয় স্বত:সিদ্ধ (যেমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা বহু জীবন ও সম্পদ নাশের কারণ হতে পারে), আবার অনেক ছোট ছোট ঘটনা এমন থাকে যেগুলি জরুরি অবস্থা কি না তা নিশ্চিত করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক (বা ক্ষতিগ্রস্ত পার্টির) বয়ানের দরকার হতে পারে। জরুরী অবস্থার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা কি তা সংশ্লিষ্ট স্থানের আইন তথা ঘটনার সাথে জড়িত  সংস্থা এবং গুরুত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতির  নির্ভর করে এবং এটি সাধারণত সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। সরকারী সংস্থার (জরুরী সেবা) উপর জরুরী অবস্থায় পরিষেবা প্রদানের তথা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কাজের দায়িত্ব বর্তায়।

জরুরী হওয়ার জন্য একটি ঘটনাকে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে অন্তত একটি হতে হয় : যদি এটা:
  • জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, বা পরিবেশের উপর তাৎক্ষণিক হুমকি দেয়।
  • ইতিমধ্যে জীবননাশ, স্বাস্থ্যের অবনতি, সম্পত্তির ক্ষতি, বা পরিবেশগত ক্ষতিসাধন করে থাকে।
  • বর্ধিত আকার ধারণ করে জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, বা পরিবেশের ক্ষতি করার বিস্তর সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন : কোন কোন প্রেক্ষাপটে জরুরী অবস্থা জারি যায়?
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশে যদি কোন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা থাকে তখনই রাস্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন।


★ প্রশ্ন : সংবিধানের কত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরী অবস্থা জারি করা হয়?
সংবিধানের ১৪১(ক), ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদের আওতায় দেশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবনে হুমকির কারণে জরুরি অবস্থা (সর্বাধিক ১২০ দিনের জন্য) ঘোষিত হতে পারে।
.
সংবিধানের ১৪১ক (৩) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরিণ গোলযোগের দ্বারা বিপদ আসন্ন বলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।

সংবিধানের ১৪১ক (১) উপ-অনুচ্ছেদের শর্ততে বলা হয়েছে যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হলে ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে।সুতরাং প্রকৃতপক্ষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। অবশ্য জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের শর্তটি যোগ করার পেছনে বাস্তব কারণও আছে।

রাষ্টপতি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ব্যতীত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই প্রতিস্বাক্ষরের বিধান করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ বা এর কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।

কোনো আদালতে তাঁর ষোষণার যর্থাথতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এইটুকই দেখতে পারবে যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নেয়া হয়েছেল কিনা।

★ প্রশ্ন : জরুরী অবস্থায় কয়টি মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে? সেগুলো কি কি?
মৌলিক অধিকার স্থগিত :
১৪১ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ ৩৬: চলাফেরার স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৭: সমাবেশের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৮: সংগঠনের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪০: পেশা বা বৃত্তির-স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪২: সম্পত্তির অধিকার
.
জরুরি অবস্থায় ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে। কিন্তু অবশিষ্ট ১২ টি মৌলিক অধিকার জরুরি অবস্থা চলাকালে বহাল থাকে। তবে ১৪১ (গ) অনুযায়ী উক্ত ১২টি অধিকারের যেকোনটির বা সবগুলো বলবৎকরনের অধিকারকে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করে দিতে পারেন। দেশে এ পর্যন্ত যতোবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, প্র্রত্যেকবারই ১২টি অধিকারও স্থগিত করা হয়েছে। কাজেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে সবগুলো মৌলিক অধিকারই স্থগিত করা যায়।

★ প্রশ্ন : জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে তার ফলাফল:
১. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর পরবর্তী কোনো ঘোষণার মাধ্যমে রা তা প্রত্যাহার করা যাবে।
২. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর তা সংসদে উপস্থাপন করতে হবে এবং ঘোষণা ১২০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা অনুমোদিত না হলে ১২০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে না।
৩. যদি সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় অথবা ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে যদি সংসদ ভেংঙ্গ যায় তাহলে সংসদ পুর্নগঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাবের মাধ্যমে উক্ত ঘোষণা অনুমোদিত না হলে ৩০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে।
৪. জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদ বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত হয়ে যাবে এবং যতদিন জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকবে ততিদিন ঐ অধিকারগুলো স্থগিত থাকবে।
ফলে, নির্বাহী বিভাগ এসকল মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
আবার সংসদও এ সকল মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবে। জরুরি অবস্থা যখনই প্রত্যাহার করা হবে তখনই উক্ত অধিকারগুলো পুনরুজ্জীবিত হবে।
৫. জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতি আদেশ দ্বারা যে কোনো মৌলিক অধিকারের বলবৎকরণের অধিকার স্থগিত করতে পারবেন।

No comments